কাকতাড়ুয়া (ইংরেজি: Scarecrow) হচ্ছে কাক কিংবা অন্যান্য পশু-পাখিকে ভয় দেখানোর জন্যে জমিতে রক্ষিত মানুষের প্রতিকৃতি বিশেষ। এর মাধ্যমে পশু-পাখিকে ক্ষেতের ফসল কিংবা বীজের রক্ষণাবেক্ষনের লক্ষ্যে নিরুৎসাহিত করা হয়। ফসলের জন্য ক্ষতিকর পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার উদ্দেশ্যেই মূলতঃ মাঠে কাকতাড়ুয়া দাঁড় করানো অবস্থায় রাখা হয়। অনেকক্ষেত্রে কাকদের ভয় দেখানোর জন্য অন্য একটা কাক মেরে উঁচু জায়গায় ঝুঁলিয়ে রাখা হয়।
সাধারণত ফাঁদ হিসেবে ও ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে কাকতাড়ুয়া তৈরী করা হয়। সনাতনী ধারায় এটি মানুষের দেহের গড়নের সাথে মিল রেখে পুরনো, পরিত্যক্ত কাপড় দিয়ে কিম্ভুতকিমাকার বা সঙের ন্যায় সাজানো হয়। তারপর কৃষক কর্তৃক জমির মাঝামাঝি স্থানে গর্ত খুঁড়ে খুঁটি হিসেবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এর মাধ্যমে বাতাসের দোলায় কাপড় হাল্কা দুলতে থাকে এবং কাক অথবা চড়ুইজাতীয় পাখির উৎপাত ও সাম্প্রতিক সময়ে বীজ বপনের ফলে তাদের খাদ্য সংগ্রহ করা থেকে বিরত রাখার প্রয়াস চালানো হয়।
বসন্তকালে বাগানে কাকের উৎপাতজনিত সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। কাছাকাছি অবস্থান করে এ পাখিটি রোপিত বীজ মাঠে নেমে খেয়ে ফেলে। আধুনিক কাকতাড়ুয়া হিসেবে সচরাচর ফাঁদ মানবাকৃতির প্রতিকৃতির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার খামারগুলোয় সূর্যের আলোয় প্রতিফলিত হয় এমন ধরনের ফিতা ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রোপেন গ্যাসের সাহায্যে সৃষ্ট বন্দুকের বিকট আওয়াজও কাকতাড়ুয়ার অন্যতম বিকল্প উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে কাকতাড়ুয়ার সহজ যে চেহারা দেখা যায়, তা হলো: একটা খাড়া লম্বাকৃতির দন্ডের উপরের এক-তৃতীয়াংশে ভূমি সমান্তরালে আড়াআড়ি করে আরেকটি দন্ড বেঁধে দুপাশে হাত ছড়িয়ে দাঁড়ানো মানুষের আকৃতি তৈরি করা হয়, তারপর এই আকৃতির গায়ে জড়িয়ে দেয়া হয়, পুরোন পাঞ্জাবি, কিংবা শার্ট-লুঙ্গি। লম্বাকৃতি দন্ডের উপরের মাথায় রেখে দেয়া হয় দইয়ের পাতলা সানকির মতো মাটির পাতিল— এতে পাতিলের তলা বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকে আর একটা মানুষের গোলগাল মুখের মতো দেখায়। কেউ কেউ সেই পাতিলের তলাকে আরো বেশি বাস্তবসম্মত করতে সেখানে চোখ-মুখ এঁকে মানুষের আদল স্পষ্ট করেন। তবে অনেক স্থানে ধর্মীয় কিংবা স্থানীয় আজন্ম লালিত বিশ্বাসের প্রেক্ষিতে পাতিলের তলায় বিভিন্ন শুভ-নকশা আঁকা দেখা যায়— কখনও গোল গোল বুটি, কখনও চারকোনো ছক ইত্যাদি এঁকে মাটির সানকি দিয়ে ফসলের সু-উৎপাদন কামনা করা হয়।
কাকতাড়ুয়া বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন জনপ্রিয় মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা গ্রামীণ জীবনের মূর্ত প্রতীকরূপে উপস্থাপিত হলেও, অনেক ভৌতিক চলচ্চিত্রে কাকতাড়ুয়াকেই নির্জন কৃষিজমিতে দাঁড়ানো ভূত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রদর্শিত সিসিমপুর শিশু-ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে সেই অনুষ্ঠানের চরিত্র ইকরি কর্তৃক শিশুদেরকে কাকতাড়ুয়ার সাথে পরিচিত করা হয়েছিল। এছাড়াও বাংলাদেশের বহু গ্রামীণ নাটক-চলচ্চিত্রে কাকতাড়ুয়ার উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস